জর্জ সোরোসের জীবনী: বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী, দার্শনিক ও দানবীর
জর্জ সোরোসের জীবনীর উপরে একটি আর্টিকেল পাবলিশড করা হয়েছে। এই আর্টিকেলে জর্জ সোরোসের শৈশব ও প্রাথমিক জীবন, শিক্ষা জীবন, বিনিয়োগ ক্যারিয়ার, বিনিয়োগ দার্শনিকতা, দান ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড, ব্যাক্তি জীবন এর উপরে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে।

জর্জ সোরোস (George Soros) একজন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বিনিয়োগকারী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। জর্জ সোরোস কে আপনি যদি না চিনে থাকেন তবে আপনি নিজেকে একজন ট্রেডার পরিচয় দিতে পারবেন না। জর্জ সোরোস বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী, হেজ ফান্ড ম্যানেজার, দার্শনিক ও আন্তর্জাতিক দানবীর হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু জর্জ সোরোস কে নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভিন্ন বিষয়। British pound destroyer নামে পূরা বিশ্বের মানুষ তাকে চিনে। যদিও তাকে নিয়ে বিতর্কও নেহায়েত কম নয়। জর্জ সোরোস এর দানশীলতা ও সমাজ বিনির্মানে বিশেষ ভূমিকার জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি।
জর্জ সোরোস এর শৈশব জীবনঃ
- জর্জ সোরোস এর জন্ম ১৯৩০ সালের ১২ই আগস্ট (বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরিতে)
- তার আসল নাম ছিল György Schwartz
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি অধিকৃত হাঙ্গেরিতে তিনি ইহুদি পরিচয় গোপন করে বেঁচে ছিলেন
- ১৯৪৭ সালে তিনি হাঙ্গেরি ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান
জর্জ সোরোস এর শিক্ষা জীবনঃ
১৯৪৭ সালে জর্জ সোরোস হাঙ্গেরি থেকে ইংল্যান্ডে চলে যান। ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি London School of Economics (LSE) এ ভর্তি হন। সেখানকার দার্শনিক Karl Popper এর “Open Society” মতাদর্শ তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি ১৯৫১ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
বিনিয়োগ ক্যারিয়ার
জর্জ সোরোস তার ক্যারিয়ার শুরু করেন লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি করে। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি নিউ ইয়র্কে চলে আসেন এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং-এ যুক্ত হন।
১৯৬৯ সালে তিনি Double Eagle নামে প্রথম হেজ ফান্ড শুরু করেন, যা পরবর্তীতে Quantum Fund এ রূপান্তরিত হয়। এই ফান্ডটি বিশ্বের অন্যতম সফল হেজ ফান্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৯২ সালে তিনি ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে বড় পজিশন নেন এবং এক দিনে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার লাভ করেন, যার জন্য তিনি “The Man Who Broke the Bank of England” খ্যাতি পান।
বিনিয়োগ দার্শনিকতাঃ
জর্জ সোরোস একজন বিখ্যাত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। জর্জ সোরোস তার বিনিয়োগের জন্য Reflexivity Theory ব্যবহার করতেন, যেখানে মার্কেটে অংশগ্রহণকারীর চিন্তাভাবনা এবং তাদের সিদ্ধান্তই মার্কেটকে প্রভাবিত করে। তার মতে, মার্কেট কখনও পুরোপুরি সঠিক নয়, বরং অংশগ্রহণকারীর আচরণ ্মার্কেটকে অতিমূল্যায়ন অথবা অবমূল্যায়নের দিকে ঠেলে দেয়।
দান ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড
জর্জ সোরোস তার Open Society Foundations (OSF) এর মাধ্যমে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন, যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানবীরদের একজন করেছে। তার দানের মূল ক্ষেত্রসমূহ:
-
শিক্ষা ও বৃত্তি
-
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচার
-
মানবাধিকার রক্ষা
-
স্বাস্থ্যসেবা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ
বিশেষত, তিনি পূর্ব ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোতে গণতন্ত্র ও উন্মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
জর্জ সোরোস তিনবার বিয়ে করেছেন এবং তার পাঁচটি সন্তান রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দার্শনিক আলোচনায় আগ্রহী এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বই রচনা করেছেন।
রচিত গ্রন্থসমূহ
জর্জ সোরোসের লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু বই:
-
The Alchemy of Finance (1987)
-
Open Society: Reforming Global Capitalism (2000)
-
The Crisis of Global Capitalism (1998)
-
The New Paradigm for Financial Markets (2008)
এই বইগুলোতে তিনি তার বিনিয়োগ পদ্ধতি, বাজার বিশ্লেষণ এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।
বিতর্ক ও সমালোচনা
সোরোস তার রাজনৈতিক এবং আর্থিক কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকেই তার ওপেন সোসাইটি প্রকল্পকে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে, আবার অনেকেই তার বিনিয়োগ পদ্ধতিকে আক্রমণাত্মক মনে করেন। তবে তিনি বরাবরই তার কর্মকাণ্ডকে মানুষের স্বাধীনতা এবং উন্মুক্ত সমাজের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে এসেছেন।
জর্জ সোরোস একজন বিনিয়োগ জগতে কিংবদন্তি এবং উন্মুক্ত সমাজের পক্ষে দৃঢ় সমর্থক। তার জীবনের গল্প একজন শরণার্থী থেকে বিলিয়নিয়ার এবং বিশ্বব্যাপী দানবীর হয়ে ওঠার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার জীবন আমাদের শেখায় যে দারিদ্র্য, যুদ্ধ এবং সকল প্রতিকূলতার মাঝেও দূরদৃষ্টি, শিক্ষা এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে একজন মানুষ বিশ্বে পরিবর্তন আনতে পারে।
What's Your Reaction?






